বেথলেহেমে নীরব বড়দিন উদযাপন
- By Jamini Roy --
- 25 December, 2024
গাজার চলমান যুদ্ধের কারণে যীশু খ্রিষ্টের জন্মস্থান বেথলেহেমে এবারের বড়দিন উদযাপন হচ্ছে সম্পূর্ণ অনাড়ম্বরভাবে। খ্রিষ্টধর্মের প্রধান এই উৎসব, যা সাধারণত আনন্দ, সাজসজ্জা, এবং উৎসবের সঙ্গে পালিত হয়, এবার শুধুমাত্র ধর্মীয় রীতিনীতি মেনে পালিত হচ্ছে। যুদ্ধের শিকার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাদের দুর্ভোগ তুলে ধরার জন্য স্থানীয় প্রশাসন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গাজার উপত্যকায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে বেথলেহেমে এটি টানা দ্বিতীয়বারের মতো নীরব বড়দিন উদযাপন। সাধারণত, বড়দিন উপলক্ষে শহরটি বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে হাজার হাজার পর্যটকের পদচারণায় মুখর থাকে। ম্যাঞ্জার স্কয়ারের কেন্দ্রস্থলে বড় ক্রিসমাস ট্রি, আলোকসজ্জা, এবং সঙ্গীতানুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করা হয়। কিন্তু এবার সেই চিত্র সম্পূর্ণ অনুপস্থিত।
গাজার চলমান যুদ্ধ ফিলিস্তিনি জনগণের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছে। বেথলেহেমের মেয়র জানিয়েছেন, যুদ্ধের কারণে উদযাপনের জাঁকজমক বাদ দেওয়া হয়েছে। এ বছরের মূল লক্ষ্য হলো বিশ্ববাসীকে ফিলিস্তিনের বাস্তবতাকে জানানো। শহরের নীরবতা এবং সাদামাটা উদযাপন একটি শক্তিশালী বার্তা বহন করে—নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা এবং ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থনের আহ্বান।
শহরটির এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, "বড়দিনের আনন্দ নেই, কারণ গাজার প্রতিটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত। নিহতদের স্মরণে আমরা কেবল প্রার্থনা করছি।"
বড়দিন উপলক্ষে শহরজুড়ে নেই কোনো আলোকসজ্জা, সঙ্গীতানুষ্ঠান বা বর্ণাঢ্য মিছিল। কেবলমাত্র ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানগুলো পালন করা হচ্ছে। স্থানীয় চার্চগুলোতে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীরা যীশু খ্রিষ্টের জন্মের স্মরণে প্রার্থনা করছেন। গাজার নিহতদের জন্য বিশেষ প্রার্থনা এবং শান্তি কামনার মধ্য দিয়ে দিনটি পালিত হচ্ছে।
বেথলেহেমের মেয়র জানিয়েছেন, এই নীরব উদযাপনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের দুর্দশার প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য। তিনি বলেন, "আমরা আমাদের নীরবতার মাধ্যমে ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করছি এবং বিশ্বকে আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা আমাদের পাশে দাঁড়ায়।"
বড়দিনের এমন অনাড়ম্বর উদযাপন শুধু বেথলেহেম নয়, পুরো ফিলিস্তিনের জন্য একটি নতুন বাস্তবতার প্রতীক। এটি যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের জন্য শোক প্রকাশ এবং শান্তির প্রতিজ্ঞার দিন হিসেবে পালিত হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে বড়দিনের উৎসব আনন্দমুখর হলেও যীশু খ্রিষ্টের জন্মস্থান বেথলেহেম যেন হয়ে উঠেছে শোক ও নীরবতার প্রতিচ্ছবি। এটি শুধু বড়দিনের উদযাপন নয়, বরং ফিলিস্তিনের চলমান সংকটের প্রতীক।